ত্বকচর্চায় ভিটামিন
ত্বকের যত্নে অ্যাসিড ও ভিটামিন কাজে লাগাবেন কীভাবে? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে লিখছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।
ভিটামিন। খেলেও ভালো। আবার মাখলেও। এ তো গড়ে সকলেরই জানা। কিন্তু অ্যাসিড? শুনলে তো প্রথমে ভয়ই লাগে। মনে হয় অ্যাসিড তো ব্যবহার্য নয়। না। এ তথ্য ঠিক নয়। বরং ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যাসিড ব্যবহারও এখন ট্রেন্ডি। তা ক্ষতি করে না। বরং কোনও সমস্যা থাকলে তা সারিয়ে তোলে অনায়াসে। সঙ্গে ভিটামিন দোসর। কসমেটোলজিস্ট এবং এস্থেটিক কনসালট্যান্ট সায়ন্তন দাস দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছেন অ্যাসিডের ব্যবহার জেনে তা ব্যবহার করলে ফল ভালো হয়। সবরকম ত্বকে সব ধরনের অ্যাসিড ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারও কোনও সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট কোনও অ্যাসিড কার্যকর হতে পারে। সে কারণেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি। ‘কোন কোন অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারি, সেটা জানতে হবে। বিভিন্ন খাবারে অ্যাসিড রয়েছে। আমাদের শরীরে সারাদিন নানা রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। ত্বক চর্চাতেও অ্যাসিডের আধিক্য এখন দেখা যায়,’ বললেন তিনি। কিছু অ্যাসিডের গুণাগুণ সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন।
অ্যাসিড দিয়ে রূপচর্চা
এই তালিকায় প্রথমেই আসবে হায়ালুরনিক অ্যাসিড। যা সবথেকে নিরাপদ। এটা ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। কিছু বেরি, কমলালেবু, আমন্ড, মিষ্টি আলুর মধ্যে এই অ্যাসিড থাকে। সব একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা ঘরোয়া প্যাক ত্বকে লাগাতে পারেন। তবে হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহার করার আগে দেখতে হবে তাতে এই অ্যাসিড যেন ১০ শতাংশের বেশি না থাকে।
ইদানীং টিনএজারদের খুব পছন্দ নিয়াসিনামাইড অ্যাসিড। এর মধ্যে ভিটামিন বি-থ্রি থাকে। ত্বকের দাগছোপ দূর করতে দারুণ কাজ দেয়। কারও ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে বেশি তেল নিঃসরণের ফলে রোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেগুলো খুলতে সাহায্য করে। ব্রণ, অ্যাকনের মতো সমস্যা কমায় এই অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট। আখের রস, মাল্টার রসে থাকে নিয়াসিনামাইড অ্যাসিড। সরাসরি ত্বকে কিছুক্ষণ রেখে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
অ্যাসিডের দুনিয়ায় ল্যাকটিক অ্যাসিড বেশ পরিচিত নাম। যে কোনওরকম দাগছোপ দূর করতে ওস্তাদ। ধরুন, মুখের ত্বক রোদে পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে। ট্যান পড়েছে শরীরের অন্যান্য খোলা অংশেও। ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করে ট্যান দূর করতে পারেন। তবে সেরাম বা ময়েশ্চারাইজার যেভাবেই তা ব্যবহার করুন ল্যাকটিক অ্যাসিডের পরিমাণ যেন ৭-৮ শতাংশের বেশি না থাকে। এটা ত্বকের উপরের মৃত কোষকে তাড়াতাড়ি নির্মূল করতে সাহায্য করে। বাটার মিল্কে প্রচুর ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। এর সঙ্গে মধু এবং জল মিশিয়ে সপ্তাহে দু’দিন লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। দুগ্ধজাত প্রোডাক্টে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। সায়ন্তন বললেন, ‘কাঁচা দুধ মুখে লাগালে ভালো ফল পাবেন।’
এরপরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। যা ত্বকের বলিরেখা, মেচেতা দূর করে। আনারস, কাঁচা আঙুরে প্রচুর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড রয়েছে। এই দুটো ফল চটকে নিয়ে ত্বকের যে অংশে মেচেতার দাগ রয়েছে তার উপর লাগালে ভালো ফল পাবেন। সায়ন্তনের সতর্কবাণী, ‘ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। কারণ বিশেষ কিছু সমস্যার সমাধানে এটা ব্যবহার হয়।’
কয়েকটি অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ভিটামিনের মিশ্রণে তৈরি হয় রেটিনল। এটা ত্বকের বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। গাজরের বীজে প্রচুর রেটিনল আছে। বীজ থেঁতো করে তাতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে মাসাজ করে লাগালে বলিরেখা খুব দ্রুত চলে যায়।
‘যাদের ত্বকে পোস্ট ইনফ্ল্যামেটরি হাইপার পিগমেনটেশন রয়েছে অথবা দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচারের ইতিহাস থাকলে অ্যাসিড নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করবেন না,’ বললেন সায়ন্তন।
ভিটামিন দিয়ে যত্ন
ভিটামিন ডি নিয়ে প্রথমে আলোচনা জরুরি। ত্বকের যে কোনওরকম দাগ দূর করে। ত্বক সেনসেটিভ হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। শুষ্কতা দূর করে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, সকালের রোদে ১০ মিনিট দাঁড়ানো ত্বকের পক্ষে ভালো। স্যামন, টুনা মাছে ভিটামিন ডি রয়েছে। যা খেলে হাড় মজবুত হয়।
ভিটামিন সি-এর উপকারিতা স্বাস্থ্যসচেতন যে কোনও মানুষ জানেন। সায়ন্তন জানালেন, ত্বকের পরিচর্যায় সি হল ‘রাজা ভিটামিন’। কোলাজেন বাড়িয়ে ত্বককে টানটান রাখে। স্ট্রবেরি, কমলালেবু, ব্রকোলি, পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন সি। যা অ্যান্টি-রিংকল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। কমলার রস ও ওটমিল্ক মিশিয়ে তৈরি ঘরোয়া প্যাক পুজোর আগে ত্বকচর্চায় ব্যবহার করুন। সায়ন্তন জানালেন, এটা ময়েশ্চার এবং তেলের ভারসাম্য রক্ষা করে। সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাদামে। সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়োর দানায় পাওয়া যায় ভিটামিন ই।
ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধায় সাহায্য করে। স্ট্রেচমার্ক সারাতে সাহায্য করে। পক্স বা অস্ত্রোপচারের দাগ নির্মূল করে। চোখের ডার্ক সার্কেল দূর করে। পালংশাক, বাঁধাকপি, বিনসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। এইসব সব্জি বেটে ত্বকে লাগান। দারুণ উপকার পাবেন।