চা দিয়ে রূপচর্চা

ত্বক ও চুলের যত্নে কীভাবে কাজে লাগে চা? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে লিখছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

দিনের শুরু এবং দিনের শেষে তার প্রেমে থাকেন, এমন বাঙালির সংখ্যা কম নয়। আর দিনভর কতবার যে সেই পানীয়কে আপন করে নেওয়ার সুযোগ আসে, সে হিসেব করাও বাতুলতা। তার পরিচয় নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। স্বাদে, গন্ধে বছরভর বাঙালির পছন্দের তালিকায় থাকা পানীয় চা। তবে চা শুধু পান করেই ক্ষান্ত থাকবেন কেন? বিভিন্ন ধরনের চা পাতাকে রূপচর্চাতেও কাজে লাগাতে পারেন। কীভাবে ঘরোয়া উপায়ে চা পাতা দিয়ে রূপচর্চা করবেন, তার উপায় জানালেন কসমেটোলজিস্ট এবং অ্যাসথেটিক কনসালট্যান্ট সায়ন্তন দাস।
ইতিহাস বলছে, বহু বছর আগে চীনে চায়ের প্রথম প্রচলন। তা বিভিন্ন রকমফেরে ভারতে আসে। ভারতীয়রা চা পছন্দ করেন। তবে বাঙালিদের চা-প্রিয়তা প্রশ্নাতীত। চা শরীর ভালো রাখতে কাজে লাগে। চায়ের অনেক গুণাগুণ। চায়ের মধ্যে পলিফেনল, ফ্ল্যাবানয়েডস, ট্যানিন-এর মতো উপকারী উপাদান রয়েছে। যে কোনও ধরনের চায়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ই। এই ভিটামিনগুলো দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ত্বকের জন্য ভীষণ কার্যকরী। চায়ের অনেক ভাগ রয়েছে। হোয়াইট, গ্রিন, ব্ল্যাক, ওলঙ্গ টি বেশ জনপ্রিয়।

সায়ন্তন জানালেন, কোন চা কতটা প্রসেস করা হচ্ছে, তার উপর এই ভাগগুলো নির্ভর করে। যেমন চা পাতা তোলার পর খুব কম প্রসেস যেটা করা হয় সেটা হোয়াইট টি। এটা অত্যন্ত দামি। এর মধ্যে সবথেকে বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা ওজন কমাতে, হার্টের অসুখে উপকারী। আবার মুখে ঘাম থেকে কোনও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে সেটাতেও কাজ করবে। আমাদের কোষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়ে যায়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সেগুলো বন্ধ করতে সাহায্য করে। ফ্রি রেডিক্যাল যত কমবে তত ত্বক প্রাণবন্ত হবে, উজ্জ্বল হবে। ত্বকের বলিরেখা কমবে। তত ত্বকে বয়সের ছাপ কমবে।
গ্রিন টি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা খেলে কোলেস্টরল কমে যায়। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। গ্রিন টির মধ্যে সবথেকে বেশি ভিটামিন ই পাওয়া যায়। যা ত্বককে ময়েশ্চার করে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। ত্বকচর্চার রুটিনে প্রথমে ভালো করে স্ক্রাবিং করার নিয়ম। চা স্ক্রাবার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। টি-ব্যাগ দিয়ে চা করার পর সেটাকে ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে নিন। এরপর ব্যাগটা খুলে পাতাগুলো বের করে তার সঙ্গে মধু, বেটে নেওয়া কাঁচা হলুদ মিশিয়ে মুখে ১০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। এটা দারুণ স্ক্রাবার। যা ত্বকে কোনও দাগ ফেলবে না। ত্বকের কোলাজেন টিস্যুকে ড্যামেজ করবে না। কারণ চায়ের পাতা খুব নরম। একই সঙ্গে ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের কাজও করবে।
সূর্যরশ্মি থেকে ত্বক কালো হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ সমস্যা। ত্বকে ট্যান পরলেও চা ব্যবহার করতে পারেন। সায়ন্তনের কথায়, ‘চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড ত্বকের কালো ভাব দূর করতে সাহায্য করে। একটি পাত্রে চা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। এবার তার মধ্যে চার ফোঁটা গ্লিসারিন আর দুই ফোঁটা পাতিলেবুর রস দিন। নরম সুতির কাপড়ে এই মিশ্রণ ভিজিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। প্রতিদিন এটা ১৫ মিনিট করে করলে ত্বকে যে ট্যান পরে, কালচে হয়ে যায়, সেটা দূর করতে পারবেন।’

ব্রণর সমস্যায় জেরবার হন যে কোনও বয়সের মানুষ। এটা সারাতেও চা উপকারী। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, প্রথমে টোম্যাটো পেস্ট করে নিন। এর সঙ্গে গ্রিন টি বা হোয়াইট টি বা চায়ের লিকার নিন। সেটা অবশ্যই চিনি ছাড়া হতে হবে। লিকার করার সময় দুটো পুদিনা পাতাও ফুটিয়ে নেবেন। এর সঙ্গে অল্প কর্পূর মিশিয়ে নিন। মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এতে ব্রণ কমবে। গরমকালে যদি ঘামাচির সমস্যা থাকে সেটাও কমাতে সাহায্য করে।
চোখের ফোলাভাব কমাতে বা কালচে ভাব দূর করতে চা ব্যবহার করতে পারেন। চা করার পর টি-ব্যাগ থেকে চা পাতা বের করে নিন। তার সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মেশান। এই মিশ্রণ চোখের চারপাশে লাগিয়ে রাখুন। এর মধ্যে দুই ফোঁটা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে লাগালে চোখের চারপাশের কালচে ভাবও দূর হবে।
ইদানীং অনেক রকম ফ্লেভারের চা পছন্দ করেন মানুষ। তার মধ্যে ট্রেন্ডি হল অপরাজিতার চা বা ব্লু টি। এতে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন, ফ্ল্যাবনয়েডস, পলিফেনাল পাওয়া যায়। এটা নিয়মিত খেলে ত্বক, চুল ভালো থাকে। সায়ন্তন বললেন, ‘এতে অ্যান্থুসিয়ানিন নামে একটা উপাদান রয়েছে। যেটা স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। প্রতিদিন শ্যাম্পু করার পর চুল হালকা করে মুছে নিন। এরপর অপরাজিতার চা একমগ জলে মিশিয়ে চুলে দিতে পারলে চুলের নানা সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।’ তিনি আরও জানান, দুই কাপ জলে চা ছেঁকে নিয়ে দুই ফোঁটা পাতিলেবুর রস ও দুই ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। তার সঙ্গে অর্ধেক চা চামচ মধু মেশান। মধুতে সমস্যা থাকলে রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে মাথায় লাগান। এরপর শ্যাম্পু করে নিন। এতে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। চুল উজ্জ্বল হবে।
ত্বকে তাৎক্ষণিক উজ্জ্বলতা পেতে চাইলে চায়ের লিকারের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আমন্ড গুঁড়ো, এক টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো এবং পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। এটা মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। মুখ ধুয়ে নিলে সঙ্গে সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে। এবার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো আপনার সময় ও সুযোগ অনুযায়ী চা-কে রূপ রুটিনেও কাজে লাগান।

Scan the code