সৌন্দর্য্যের ম্যাজিক লুকিয়ে ঘুমে
অনিদ্রার জেরে ত্বক তো বটেই, ক্ষতি হয় শরীরেরও। ঘুম ভালো হলে জেল্লা দেবে ত্বক। রইল পরামর্শ।
ঘুম নিয়ে জেরবার আধুনিক মানুষ। টেনশন তার নিত্যসঙ্গী। আর তাই আমাদের দেশ ভারত ঘুম থেকে বঞ্চিত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে নাম লিখিয়েছে। সবার উপরে নাম রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা দেশ জাপানের। গত বছর থেকেই এই তথ্য সংবাদমাধ্যমে ঘুরছে। ফলে নতুন বছরে নিত্যনতুন শপথ নেওয়ার আগে একটু ভেবে দেখতে হবে বিশ্রামের কথাও। বিশ্রাম ও ঘুম— জীবনযাত্রায় সুস্থতা বজায় রাখার জন্য দু’টি ভীষণ জরুরি উপাদান। অথচ এযুগে কর্মব্যস্ততা, নিজেকে প্রমাণ করার অবিরাম তাগিদ কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় মোবাইলকে দিয়ে ফেলার কুঅভ্যাস ভাগ বসাচ্ছে ঘুমের স্বাভাবিক চলনে। আর ঘুম বিপর্যস্ত হওয়ার অর্থ সার্বিকভাবে শরীর ও মনের ক্ষতি। সেই ক্ষতি সরাসরি ছাপ ফেলে চোখেমুখে। যত সৌন্দর্য উপাদান দিয়ে নিজেকে মুড়ে রাখুন না কেন, সঠিক ঘুম ছাড়া রূপচর্চা বৃথা যাবে।
শহর বলুন বা গ্রাম, অনিদ্রার সমস্যায় এত মানুষ ভুগছেন যে এখন ঘুমকে ভালোরকম যত্নআত্তির মাধ্যমে ডেকে আনতে হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়েলনেস কেয়ার-এর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ঘুমের সমস্যাও। আয়ুর্বেদ থেরাপি করিয়ে নির্বিঘ্ন ঘুম খুঁজছে আধুনিক মানুষ। ২৪ ঘণ্টা দিনরাতের মধ্যে ন্যূনতম সাত ঘণ্টা চোখ বুজে থাকতে পারছে না অনেকেই। বিষয়টি সেভাবে অনেকের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠার আগেই সতর্ক হতে হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৮৭ শতাংশ ভারতীয় শুতে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। অথচ ঘুমের আগে স্ক্রিন টাইম নৈব নৈব চ। সমীক্ষা অনুযায়ী, এভাবে সঠিক সময়ে ঘুম থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে ৬৭ শতাংশ মহিলা কর্মস্থলে ঘুম-ঘুম ভাব নিয়ে কষ্ট পান। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ একই সমস্যায় পড়েন। প্রতি বছর এই হারটা বাড়ছে।
আর তাই নতুন বছরে ঘুম নিয়ে অবহেলা নয়। বিছানায় যাওয়া এবং ওঠার সময়টা যে যার রুটিন অনুযায়ী করে থাকেন, সেটা অবশ্যই মেনে চলুন। এতে ঘুমজনিত সমস্যা ক্রমশ কমবে। যাদের ঘুম আসতে সময় লাগে, তাদের ক্ষেত্রেও ঘড়ি মেনে স্লিপ সাইকেল ঠিক করা গেলে এ ধরনের সমস্যা দূর হবে, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
নারী পুরুষ যেই হোন, ঘুম ছাড়া মুখে ডার্ক সার্কল নিয়ে ঘুরতে কারই বা ভালো লাগে? শুধু চোখের চারপাশে কালো গহ্বর ছেড়ে দিন, ঘুম না হলে ত্বকের উপরেও যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। নিষ্প্রাণ দেখায়। শীতকালে এ সমস্যা আরও বেশিমাত্রায় ছাপ ফেলে ত্বকে। কারণ এসময় জল খাওয়াও কমে যায়। এস্থেটিশিয়ান সায়ন্তন দাস বলছেন, ‘নারকেলের জল, ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, শসার রস, ঘরে পাতা দই অথবা ছানা এগুলো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। কম ঘুম বা জল কম খাওয়ার অর্থ গোটা শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়া।
তার জন্য প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে আর্দ্রতা পৌঁছতে পারলে দেহের ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই এসময়টা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজ ডাবের জল বা আখের রস ডায়েটে রাখতে পারেন। আখের রসে থাকে প্রচুর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। এতে ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ও সুস্থ থাকে।’
ঘুমের সমস্যা যাদের রোজকার সঙ্গী, সমস্যার কারণটা তাদের খুঁজে বের করা দরকার, জানালেন সায়ন্তন। তিনি বললেন, ‘কারও অ্যানিমিয়া, কারও উচ্চ রক্তচাপ, কারও অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকতে পারে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন। ‘বডি ক্লক’ মেনে চলুন। সাধারণভাবে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য যে যে বিষয় মাথায় রাখতে বললেন তিনি, সেগুলো হল, ‘প্রথমত, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ২৫ মিনিট আগে স্ক্রিন টাইম বন্ধ করে দিন। কারণ তা না হলে হরমোন স্টিমুলেট করে ঘুম আসতে সমস্যা হয়। দ্বিতীয়ত, ঘুমানোর জায়গাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেই ঘরে কিছু এসেনশিয়াল অয়েল রাখতে পারেন। রাতে শোওয়ার আগে ল্যাভেন্ডার অয়েল কয়েক ফোঁটা বালিশে দিতে পারেন। ল্যাভেন্ডার নার্ভকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এতে বডি ও ব্রেন দুই-ই রিল্যাক্সড পাবে। ঘুম তাড়াতাড়ি আসবে। তৃতীয়ত, রাতে শোওয়ার আগে হাফ কাপ দুধের মধ্যে সামান্য কাঁচা হলুদ এবং সামান্য গুড় বা অল্প খেজুর দিয়ে যদি খাওয়া যায়, সেটাও শরীর ও পেশি রিল্যাক্স করতে পারে। এগুলো মেনে চললে উপকার পাবেন।’
মনে রাখবেন, রাতের ঘুম যত ভালো হবে, সার্বিকভাবে ত্বক ভালো থাকবে এবং অফুরন্ত জীবনীশক্তি পাবেন সারাদিনের কাজে। ফলে রাতের ঘুম নিয়ে হেলাফেলা করা বন্ধ করুন। নিজের সুস্থতার পথ নিজেই খুঁজে পাবেন।