রং খেলায় সাবধানতাঃ

দোলের দিনে কীভাবে যত্ন নেবেন নিজের? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে লিখলেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

রঙের দিন, আট থেকে আশির রঙিন হওয়ার দিন সমাগত। তাকে তো বরণ করে নিতে হবে। রং খেলবেন, কিন্তু সবরকম সাবধানতা বজায় রেখে। ত্বক এবং চুলকে বাঁচিয়ে রঙিন হয়ে উঠুন। রঙিন হওয়ার আনন্দে নিজের যত্ন ভুলে গেলে সমস্যা বাড়বে। তাই আগে থেকেই সচেতন হওয়া ভালো। কসমেটোলজিস্ট এবং এসথেটিক কনসালট্যান্ট সায়ন্তন দাস সেই পরামর্শই দিলেন। শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক— কমবেশি সকলেই রং খেলতে ভালোবাসেন। কিন্তু দোল খেলার পর শারীরিক অসুস্থতা বা ত্বক ও চুলজনিত সমস্যায় ভোগেন অনেকে। কারণ বেশিরভাগ রঙের মধ্যেই রাসায়নিক ব্যবহার হয়। আজকাল অনেক হার্বাল আবির পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু হার্বালের নাম করে ভেজালও পাওয়া যায় বাজারে। ভেজালের মধ্যে চকচকে একটা জিনিস থাকে। ওগুলো কাচের গুঁড়ো বা পারদ। এগুলো একটু দেখে কিনতে হবে। সার্বিকভাবে মাথায় রাখুন, কোনওভাবে যেন রং চোখে না ঢুকে যায়। দাঁত বা মুখের সংস্পর্শে না আসে। এর মধ্যে রাসায়নিক থাকার ফলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। হাতের কাছে সাধারণ আইড্রপ রেখে দিন। চোখে রং চলে গেলে সেই আইড্রপ দিতে পারেন। ফুলহাতা সুতির জামা পরে রং খেলুন। রং খেলার মাঝে জল, ডাবের জল বা কোনও ডিটক্স ওয়াটার খেতে থাকুন। পাতিলেবু বা পুদিনা মেশানো জল খান। যাতে শরীর ডিহাইড্রেট না হয়ে যায়।

দোলের দিন সকালে মুখ এবং ত্বক ক্লিনজিং করুন। তারপর একটু সেরাম লাগাতে পারেন। তা না লাগালেও ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ঘন করে ময়েশ্চারাইজার লাগান। যাতে রোমকূপগুলোতে ময়েশ্চারাইজার ভর্তি থাকে, রং না ঢুকতে পারে। এসপিএফ যুক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগালে তা সানস্ক্রিনের কাজও করবে। বডি লোশন লাগালে তা তৈলাক্ত হতে হবে। বডি অয়েলের উপরও সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন। সানস্ক্রিন মাস্ট। নাহলে ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ময়েশ্চারাইজারের উপর সানস্ক্রিন লাগালে ত্বকে দুটো আস্তরণ থাকছে। ফলে যত খারাপ রাসায়নিকই হোক
না কেন, ত্বকের ভিতরে গিয়ে ক্ষতি করবে না।

 

চুলের ক্ষেত্রে ভালো করে তেল মাসাজ করে টাইট করে আটকে নিন। এক্ষেত্রে নারকেল তেল সবথেকে ভালো। অয়েল মাসাজের পর লিভ অন কন্ডিশনারও ব্যবহার করে রং খেলতে যেতে পারেন। তাতে যাই রং লাগুন, চুলের আসল রং নষ্ট হবে না। চুল স্ট্রেটনিং, কেরাটিন বা হাইলাইট করা থাকলে তাও নষ্ট না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কন্ডিশনার আপনি বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন। অর্ধেক কাপ জলের মধ্যে চার চামচ মেথি দিয়ে ফোটাতে পারেন। জলটা শুকিয়ে গেলে একটা থকথকে পদার্থ বেরবে। সেটা ভালো করে ছেঁকে চুলে লাগিয়ে রং খেলুন। এই কন্ডিশনারে চুল রঙের হাত থেকে সুরক্ষা পাবে।
দোলে কোন রং নিয়ে খেলবেন, তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা এগজিমা থাকলে বুঝেশুনে রং খেলুন। এসব সমস্যা আগে থেকে থাকলে শুকনো রং বা আবির দিয়ে রং খেলুন। 

এছাড়াও যাঁদের হাঁপানি রয়েছে বা অ্যালার্জি রয়েছে তাঁরা কখনও রাসায়নিক রং ব্যবহার করবেন না। হার্বাল বা ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি রং ব্যবহার করুন। তা না করলে ত্বকে শ্বেতি পর্যন্ত হতে পারে। 

রং খেলে এসে কী করবেন !
১) বড় বালতিতে নুন এবং খাওয়ার সোডা ১ : ১ অনুপাতে মেশাবেন। ২০ লিটার জল ধরে এমন বালতিতে ছ’চামচ নুন এবং ছ’চামচ খাবার সোডা মেশানো জলে স্নান করবেন। প্রথমেই মাথায় জল দেবেন না। মাথা ভালো করে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে শুকনো রং ঝেড়ে ফেলে দিন। তারপর ওই জলটা মাথায় ঢালুন। 
২) রঙের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। রং খেলার পর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। টক দই এবং হলুদ মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে হাল্কা ঘষে নিয়ে পাঁচ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দইতে সমস্যা থাকলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে বেসন মিশিয়ে মুখে ১০ মিনিট লাগিয়ে তুলে ফেলুন। এগুলো ত্বকের ভিতরে ঢুকে পরিষ্কার করে। ব্রণর সমস্যা থাকলে চন্দন পাউডারের সঙ্গে দু’ফোঁটা পাতিলেবুর রস লাগিয়ে মুখে লাগিয়ে ধুয়ে নিন। এই প্যাকটা লাগালে রঙের থেকে আর ত্বকের ক্ষতি হবে না।
৩) রং খেলার পর প্রতি ঘণ্টায় একবার করে ময়েশ্চারাইজার লাগান। তৈলাক্ত ত্বক হলে অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার আর শুষ্ক ত্বক হলে তৈলাক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগান।
৪) ত্বকের খোলা অংশে চালের গুঁড়োর সঙ্গে টক দই বা কাঁচা দুধ ও তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস বা টম্যাটো পাল্প নিয়ে হাল্কা ঘষে ওয়াশ করে ফেলবেন। এই প্যাক ত্বকে স্ক্রাবিংয়ের কাজ করবে। এরপর বডি লোশন লাগিয়ে নিন। 
৫) মাথায় শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার লাগিয়ে সেরাম লাগান।

Scan the code