শ্বাস নিক ত্বক

পুজোর অনিয়মের পর ত্বক ও চুলকে সার্বিকভাবে ভালো রাখার উপায় জানালেন বিশেষজ্ঞ। লিখেছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

গলি থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে আলো। হোর্ডিং নেমেছে। বাঁশ খুলে নেওয়ার পর পাড়ার মাঠ আবার ফিরে পেয়েছে পুরনো মেজাজ। পুজোর পর হবে বলে যেসব কাজ জমেছিল সেসব কাজের পাহাড় এবার ঘাড়ে চেপে বসছে একটু একটু করে। বছরের সেরা হুল্লোড় শেষ। তবে দুর্গাপুজো শেষ হলেও তার রেশ রয়ে যায় শরীর ও মনে। এই ক’দিনের অনিয়মের জেরে জেরবার আপনার ত্বক। তারও তাই ডিটক্স দরকার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ কিডনি, লিভারের ভালো থাকা, ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ানোই আসলে ডিটক্সের মূল কথা।

দুর্গাপুজো শেষ হলেও উৎসবের মরশুম শেষ নয়। বাঙালির পার্বণ লেগেই থাকে। তাই ধারাবাহিক সুস্থ থাকা জরুরি। আর সেখানেই ত্বককে ডিটক্স করা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে যাবতীয় রাসায়নিক থেকে দূরে থাকুন। মেকআপ করতে গেলে যেসব প্রোডাক্ট ব্যবহার করেছেন এই ক’দিন তার মধ্যে কিছু অংশ রাসায়নিক থাকবেই। তা থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক। তাই দিন কয়েকের ধকল শেষে এবার ত্বকের বিশ্রাম প্রয়োজন। এখন প্রয়োজন ছাড়া মেকআপ করবেন না।

কসমেটোলজিস্ট এবং অ্যাসথেটিক কনসালটেন্ট সায়ন্তন দাস বললেন, ‘পুজোতে সকলেরই ত্বকের উপর অত্যাচার হয়েছে। ঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুম হয়নি। মেকআপ ভালো করে না তুলেই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। পরিমাণ মতো জল খাওয়া হয়নি। জল কম খাওয়ার ফলে ত্বক ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। ফলে এই সময় ত্বকে জলীয় পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ত্বককে প্রচুর জল দিতে হবে। সেটা বিভিন্নভাবে সম্ভব। প্রথমত প্রচুর জল খেতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ৮-১০ গ্লাস জল পান করা উচিত। এতে খাবার হজম ভালো হবে। শরীরে অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ দূষিত দ্রব্য দ্রুত বের করে দিতে পারবে। পাশাপাশি হাইড্রেটিং ময়শ্চারাইজার, সিরাম ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।’ ত্বক সুরক্ষিত না হলে তার যত্ন করে কোনও লাভ হবে না। ফলে এসময় দিন শুরু করুন এক বোতল ডিটক্স জল দিয়ে। কীভাবে তা তৈরি করবেন? সায়ন্তন বললেন, ‘রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক লিটার জলের মধ্যে পাতিলেবু, শসা, পুদিনা পাতা, আদা ফেলে দিন। সারা রাত জলের মধ্যে এগুলো ভিজুক। সকালে তা ছেঁকে নিন। এবার সারাদিন ধরে ওই জলটা অল্প অল্প করে খেতে পারেন। এই জল সারা শরীর ডিটক্স করবে। তাহলেই ত্বকও ডিটক্স হবে। এই জল শরীরের পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়ামকেও ব্যালান্স করতে সাহায্য করে।’ এছাড়া শরীরে পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে সকালের ডায়েটে রাখতে পারেন ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। পুজোর সময় ছাতা বা সানগ্লাস নেওয়ার কথা অনেকেরই মনে থাকে না। আসলে আনন্দের আয়োজনে সারা বছরের নিয়মের তো বাঁধ ভাঙবেই। কিন্তু সূর্যের ইউভি রশ্মি ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে। বেশিক্ষণ রোদে থাকলে ত্বকের উপর দাগ ছোপ পড়ে যায় দ্রুত। সেকারণেই কড়া রোদ্দুর এড়িয়ে চলুন। রোদে বেরলে এসপিএফ ৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আগুনের তাপে বেশিক্ষণ কাজ করতে হলেও সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। দূষণ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন আপনার অন্যতম হাতিয়ার।
একান্তই যদি মেকআপ করতে হয় তাহলে দিনের শেষে তা ভালো করে তুলে ফেলতে হবে। র‌্যাশ, ব্রণ, কালো দাগ রুখতে ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। ডাবল ক্লেনজার ব্যবহার করুন এসময়। প্রথমে অয়েল বেসড ক্লেনজার ব্যবহার করে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর বেছে নিন আপনার ত্বকের উপযোগী ক্লেনজিং ক্রিম। ডাবল ক্লেনজিং ত্বক ডিটক্সের অন্যতম উপায়। সায়ন্তনের পরামর্শ, দিনে তিনবার মুখ পরিষ্কার করতে হবে। এক্সফোলিয়েট করাতে হবে সপ্তাহে একদিন হালকাভাবে। কখনও জোরে ঘষা যাবে না। ‘আসলে ত্বকের প্রতি আপনি যে ব্যবহার করবেন, ত্বক সেটাই আপনাকে ফেরত দেবে’, বললেন তিনি। পুজোর পর থেকেই বাতাসে হালকা শীতের টান। ফলে ঋতু অনুযায়ী বদলে যাবে যত্নের ধাপ। ঋতু বদলের কারণেই তৈলাক্ত হোক বা শুষ্ক— যে কোনও ধরনের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে শুরু করতে হবে। সায়ন্তন বললেন, ‘ক্লেনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিংয়ের রুটিন তো মানতেই হবে। তবে ডিটক্সের জন্য ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি হায়ালুরনিক অ্যাসিড বেসড সিরাম, নিয়াসিনামাইড বেসড সিরাম লাগানো যেতে পারে। অথবা যে কোনও ধরনের ত্বকে ভিটামিন সি জাতীয় সিরাম লাগাতে পারেন। এতে উজ্জ্বল হবে ত্বক। দাগছোপ দূর করবে। হাইড্রা ফেসিয়াল নিলে গ্লো ফিরে পাবেন।’ ভালো জেল দিয়ে সপ্তাহে দিন দুয়েক পাঁচ মিনিট ত্বকে মাসাজ করলেও ভালো ফল পাবেন। তবে এসব পেশাদারের পরামর্শ নিয়ে করানোই ভালো। পুজোর দিনগুলো কাটিয়ে ফেলার পর চুলেরও যত্ন প্রয়োজন। কারণ সেটাও ত্বকেরই অংশ। সায়ন্তনের কথায়, ‘পুজোর সময় নানা ধরনের স্টাইলিং করতে গিয়ে চুলের যত্ন নেওয়া হয় না। ফলে এই সময়টা কাজে লাগান। প্রতিদিন শ্যাম্পু করুন। তার আগে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন। সারা রাত তেল মাথায় রাখবেন না। এতে চুলের ক্ষতি হবে।’ খাওয়াদাওয়ার দিকেও নজর দিন। পুজোর সময় নিয়ম মেনে খাওয়া হয় না। তাই এখন বাড়ির খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। দিনে অন্তত তিনবার ভারী খাবার রাখুন। ব্রেকফাস্ট স্কিপ না করাই ভালো। আর অবশ্যই মন ভালো রাখুন। তাহলেই উৎসবের মরশুমে তরতাজা থাকবেন আপনি।
Scan the code